Sunday, December 13, 2015

কাপড়ের ভেতর

কাপড়ের ভেতর
বিধাতার সৃষ্টি’র আঠারো হাজার মাখলুকাতের মধ্যে মশা একটি ক্ষুদ্রতম কীট। এই সামান্য ক্ষুদ্র কীট’টিকে নিয়েই আমাদের বিরাট সমস্যা। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় ভাবে এর মোকাবেলা করার জন্য তুমুল কান্ড করা হচ্ছে, কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। শেষে এটাকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলার জন্য বিশেষ বিশেষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তাদের অতীতের অভিজ্ঞতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু তাতেও কিছু হচেছ না।

 ঢাকা মহানগরীর প্রাক্তন মেয়র জনাব মীর্জা আব্বাস সাহেব’কে এই মশার জন্য গদি ছেড়ে চলে যেতে হলো। অনেক সুন্দর সুন্দর আশার বাণী শুনিয়ে মশার বংশ নিপাত করার বর্জ্রকঠিন শপথ নিয়ে নির্বাচিত হলেন জনাব হানিফ। মহানগরবাসী অনেক আশা ও ভরসা নিয়ে জনাব হানিফকে মেয়র বানিয়েছিল মশার হাত থেকে কিছুটা নিস্কৃতি পাওয়ার জন্য। 

কিন্তু তিনি গদিতে বসেই বললেন- ক্ষমতায় এখন বিএনপি সরকার, তাই আমি মশক নিধনের জন্য যা যা চাচ্ছি তা পাচ্ছি না, তাই মশক নিধন আমার দ্বারা সম্ভব হচ্ছে না। মহানগরবাসী নিরবে তার অপারগতার কথা মেনে নিল। হিমালয়ে অনেক বরফ গলে পানি হয়ে সাগরে গিয়ে পড়লো। সময়ের পথ ধরে বিএনপি গিয়ে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলো। এবার মেয়র সাহেব নিজ দলের সরকার পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন মশক নিধনে। তিনি নিজের কাধে স্প্রে মেশিন লাগিয়ে উড়ো জাহাজ উড়িয়ে মশক নিধন কার্যক্রম উদ্ভোধন করলেন। কিন্তু তাতেও মশক কুলের একটি পশমও নড়াতে পারলেন না। কারণ ঔষধে নাকি ভেজাল ছিল, আর এই ভেজাল ঔধষও নাকি আমদানি করেছে পূর্বের সরকার। কাজেই উনি নিঃস্পাপ, ওনাকে দোষ দেয়া যাবে না। আরও সময় গড়িয়ে গেল। পট পরিবর্তন হলো। আওয়ামীলীগ নির্বাচনকে বকা দিতে দিতে ক্ষমতা চেড়ে দিল। এলো আবার সেই বিএনপি। এবার মেয়রও পরিবর্তন হলো। ঢাকাবাসী ভাবলো এবার হয়তো কিছু হবে। কিন্তু কিছুই হলো না। সব শেয়ালেরই এক রা। তাই মেয়রদের উপর ভরসা করে বসে থাকা আর চলবে না। তাই এই মশা নিয়ে বিশেষ ভাবনায় বসেছেন আমাদের চিন্তা মনি। আসুন দেখি আমাদের চিন্তা মনি মশা নিয়ে কি ভাবছে।
চিন্তামনি অনেক আকাশ-পাতাল ভেবে কিছুই পেলো না। কারণ এটা সত্যিই একটি সমস্যা। কিন্তু সমাধানতো বের করতে হবে? এভাবেতো চলতে পারে না। হঠাৎ ওর মনের মধ্যে অন্য একটি চিন্তা উকি দিল। ও ভাবলো সমস্যাটিকে গতানুগতিক ভাবে দেখলে চলবে না। সমস্যার ভিতরে ঢুকতে হবে। অর্থাৎ মশা নিধন হলে কাদের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হবে তাই আগে খুজে বের করতে হবে। সাধারণভাবে দেখা যায় :
 মশারীর কাপড় তৈরী, মশারী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও বিক্রেতা ;
 কয়েল তৈরীকারী প্রতিষ্ঠান ও বিক্রেতা;
স্প্রে ও ম্যাট তৈরীকারী প্রতিষ্ঠান ও বিক্রেতা;
  সিটি কর্পোরেশনের কিছু অসৎ কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ঠিকাদার।
মশার ঔষধ আমদানীকারক কিছু প্রতিষ্ঠান ও
 রাজনৈতিক নেতাগণ।
    সংখ্যায় এরা যত  ক্ষুদ্রই হউক না কেন, এদের শক্তিই হচ্ছে টাকা। কাজেই বর্তমানে টাকার কাছে দায়-দায়িত্ব, কর্তব্য-সততা সবই তুচ্ছ। এই চিন্তা মাথায় রেখে এবার দেখা যাক মশা নিধন হলে উপকৃত হবে কারা। এক কথায় সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে গরীব মানুষ। তাহলে সাধারণ মানুষের জন্য এই সমস্যার একটি সুষ্ঠু সমাধান প্রয়োজন। কিন্তুু কিভাবে ………..?
চিন্তামনি এবার ওর ভাবনাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিল। আচ্ছা সৃষ্টি কর্তা ১৮ হাজার মাখলুকাত সৃষ্টি করে সবাইকে মানুষের আজ্ঞাধীন করে দিয়েছেন এবং সেজন্যই মানুষ বনের রাজা সিংহ এবং বিশাল দেহী হাতীকে নিজেদের বশে এনে মানব কল্যাণে তাদের কাজে লাগাচ্ছে। এমনকি মৌমাছির মত ক্ষুদ্র ও বিশাল ক্ষমতাধর প্রাণীকেও নিজেদের করায়ত্ব করে কাজে লাগানো হচ্ছে। তাহলে মশাকে কি আমরা মানব কল্যাণে লাগাতে পারিনা? অবশ্যই পারি। চিন্তামনি’র ভাবনা এবার আরো দ্রুতো কাজ করতে লাগলো।
মৌমাছিকে মানুষ যেমন মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করছে মশা’কেও তেমনি মানুষের শত্রুু না ভেবে বন্ধু ভেবে তাদেরকে মানব কল্যানে কিভাবে কাজে লাগানো যায় তাই ভাবতে হবে। তবেই এই সমস্যার একটি সুষ্ঠু সমাধান খুজে পাওয়া যাবে। চিন্তামনি জানে মশা খুব সংগীত প্রিয় এবং নিজেরাও সংগীত চর্চা করে। এই সংগীতকে সামনে রেখে মশাকে বিতাড়িত করার জন্য সৃষ্টি হয়েছে ম্যাট। ম্যাট এমন একটি যন্ত্র যা বিদ্যুতের সাহায্যে শব্দ তরঙ্গ সৃষ্টি করে। ঐ শব্দ তরঙ্গ সাধারণভাবে মানুষের কানে অনুভুত হয় না, তবে মশা ঐশব্দ সইতে পারে না। যতদুর পর্যন্ত ঐ শব্দ তরঙ্গ প্রবাহিত হয় ততদুর পর্যন্ত মশা থাকতে পারে না। আমরা যদি এর উল্টোটা করি অথাৎ এমন একটি শব্দ তরঙ্গ সৃষ্টি করি যা শুনে মশা পাগলের মত সেখানে ছুটে আসবে এবং যতক্ষণ ঐ শব্দ তরঙ্গ চলবে ততক্ষণ সেখান থেকে কোথাও যাবে না। অনেকটা হ্যামিলনের বংশি বাদকের মত। তাহলে আমরা কিছু কিছু নিদিষ্ট জায়গা ঠিক করে সেখানে ঐ যন্ত্র চালিয়ে দেব। মশা’র কর্নে ঐ তরঙ্গ পৌছামাত্র সকল মশা শব্দ তরঙ্গের গতি ধরে নিদিষ্ট জায়গায় পৌছবে। তখন আমরা ইচেছ মত তাদের শেষ করে দিতে পারবো। সমস্যা সমাধান।
কিন্তুু চিন্তামনি’র এই সমাধানটি বেশী মনপুত হচ্ছে না। কারণ ও বিনা কারণে সৃষ্টির একটি জীবকে এভাবে ধোকা দিয়ে এনে মেরে ফেলেদেয়াটাকে সহজ ভাবে মেনে নিতে পারছে না। কারণ এটা ওদের সাথে বেইমানি করা হবে। আর বেইমানদের শাস্তি, সবচেয়ে নিক্‌ৃষ্ট দোজখে যাওয়া। এটা ভেবে ওর মনটা খারাপ হয়ে গেল। ও আবার ভাবতে শুরু করলো – ওদের বাচিয়ে রেখে মানুষের কি কি কাজে লাগানো যায়। আচ্ছা, এমনটি করা যায় না? – আমরা যদি বিশেষ বিশেষ জায়গায় ওদের জন্য বসবাসের জায়গা করে দেই এবং খাবারেরও ব্যবস্থা করি তবেতো ওরা মানুষকে আর বিরক্ত করবে না। আমাদের যেখানে প্রয়োজন হবে সেখানে ওদের দিয়ে কাজ করানো যাবে এমন ব্যবস্থা করা যায় না?
বর্তমানে দেখা যাচ্ছে সরকারী দল ও বিরোধী দল জনসভায় বোমা আতংকে ভুগছে। একে অপরকে দোষ দিয়ে বাজার গরম করছে। আর মাঝখান থেতে কিছু মূল্যবান প্রাণ চলে যাচ্ছে। আমরা যদি এই জনসভা ও মিছিল মিটিং এ মশাদের ব্যবহার করি তবে আর বোমার প্রয়োজন হবে না। যে দল এই ইচ্ছা পোষণ করবেন তারা শুধু নিদিষ্ট পরিমানে অর্থ জমা দিয়ে বুকিং দেবেন। সময় মত ঐ সভাস্থলে মশার শব্দ তরঙ্গের মেশিনটি নিয়ে আবিভূত হতে হবে আর ঠিক ঐ সময় মশাদের আবাসস্থলের গেটটি খুলে দিতে হবে। তাহলে কোটি কোটি মশা ঐ সভাস্থলে উপস্থিত হয়ে জনসভা ভেঙ্গে দেবে। তাতে করে মানুষ মরার কোন ভয় থাকবে না। এটা এ জন্য করা জায়েজ হবে যে, তথাকথিত ঐ জনসভা আমাদের আর কোন উপকারে আসছে না। শব্দ দূষন, পরিবেশ দূষণ, যানজট থেকে শুরু করে মানুষের নৈতিক চরিত্র, ও দেশের অসংখ্য মানুষের সময় অপচয় করে বিরাট ক্ষতি করছে।
উক।”

No comments:

Post a Comment