হানিমুন
হানিমুন বা মধুচন্দ্রিমা, কথাটা শুনলেই একটা খুব রোমান্টিক ভাব হয় মনে। এক একজন তার প্রিয়মানুষটার সাথে খুব একান্ত সময় কাটানোর কল্পনায় মশগুল হয়ে পড়ে… কিন্তু এই হানিমুন ব্যাপারটা আদপে এতো রোমান্টিক না। পুরো ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল মেয়েদের প্রতি চূরান্ত অপমান ও অবিশ্বাস থেকে। হানিমুন একটা পাশ্চাত্য রীতি। আর পাশ্চাত্য রীতিতে বিয়ের পরই নব-দম্পতি “জাস্ট ম্যারেড।
মার্কামারা একটা গাড়ি বা কিছুতে করে হানিমুনে চলে যায়। বলা হয় দুজন দুজনকে চেনার জন্য এটা খুব ভাল সময়। কিন্তু হানিমুনের উদ্ভবের সময় তাদের মধ্যে মনে হয় না এতো রোমান্টিক চিন্তা ভাবনা ছিল। একটু ব্যাখ্যা করি > হানি আর মুন, মানে চাঁদ আর মধু। কিন্তু হানিমুনের উদ্ভবকালে চাঁদ আর মধুর অর্থ ছিল অন্য।
মহিলাদের মিন্সট্রেল সাইকেল সাধারনত ২৮ দিন বা ৪সপ্তাহের হয়। আর চান্দ্রমাসের সাইকেলও ২৮ দিনের(কয়েক ঘন্টা বেশী হবে)। প্রাচীন কালে একটা ছেলের সাথে একটা মেয়ের বিয়ের পর পরই তাদের অন্য কোথাও রাত কাটানোর আগে তাদের ২৮ দিনের জন্য কোন নির্জন স্থানে পাঠিয়ে দেয়া হতো যেখানে দ্বিতীয় কোন পুরুষ নেই। স্বামী ছাড়া অন্য কোন পুরুষ না থাকার মানে মেয়েটা অন্য কারো সংস্পর্শে আসবে না। আর আর মিন্সট্রেল পিরিয়ড যখন ২৮ দিনের, তাই এই ২৮ দিন পর তারা ফেরত আসার পর যখন মেয়েটা অন্তঃসত্বা বলে প্রমান হবে, তখন নিশ্চিতভাবেই বোঝা যাবে তার শরীরে স্থান করে নেয়া সন্তানটি তার স্বামীর, কারন সেই ২৮ দিন সময়ের মধ্যে সে দ্বিতীয় কোন পুরুশের সংস্পর্শে আসে নি(আমি আর ব্যাখ্যা করার মধ্যে গেলাম না, সবাই ব্যাপারজ্ঞুলো জানেন)। চাঁদ বেচারা মধ্যে দিয়ে অবিশ্বাসীদের প্রতীকে আটকে গেল। আর মধুর কাহিনীটা হলো এই ২৮ দিন সময় কাটানোর সময় নব-দম্পতিকে হানি-মীড বা মধু দিয়ে বানানো এক ধরনের পানীয় পান করতে হতো, বিশেষ করে পুরুষদের। কারন মধু যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে, এখন যে দায়িত্বটা অনেকটাই ভায়াগ্রার। তার মানে মধু খেলে শতভাগ সম্ভাবনা থাকে মেয়েটার সেই ২৮ দিনের মধ্যেই অন্তঃসত্বা হবার। মেডিভেল ইউরোপে নারীরা দৃশ্যত স্বাধীন(যৌন স্বাধীনতা) থাকলেও বিয়ের সময় কুমারী প্রমান করাটা খুব জরুরী ছিল। আর এতো ঘেরাটোপের মধ্যে সেই সমাজ এতোটাই কলুষিত ছিল যে একটা মেয়ের সন্তানের পিতা কে সেটা কখনোই নিশ্চিত ভাবে জানার কোন উপায় ছিল না। তাই সেই অবিশ্বাস থেকেই অন্তত প্রথম সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য হানিমুন বা মধুচন্দ্রিমার উদ্ভব।
No comments:
Post a Comment